Wednesday 8 April 2020

করোনাভাইরাস সম্পর্কিত কিছু তথ্য

তথ্য নং ১



তথ্য নং ২

করোনাভাইরাস কোনও এলাকার আবহাওয়ার ‌উপর নির্ভর করে কোনও ধাতব বস্তুর উপরিতলে কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই, যদি কোনও এলাকার অনেকগুলো পরিবার একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করেন তবে অবশ্যই প্রতিবার পানি সংগ্রহ করার পর সাবান দিয়ে টিউবওয়েলের হাতলটা ভালোভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিস্কার করতে হবে। যদি এটা না করেন তবে কোনও একজন করোনা রুগির হাতের স্পর্শে টিউবওয়েলের হাতলটা হয়ে উঠতে পারে ঐ এলাকার করোনাভাইরাস বিস্তারের একটি সহজ উৎস। কারন, পানি সংগ্রহ করতে চাইলে সবাইকে টিউবওয়েলের হাতল স্পর্শ করতে হবেই।

তথ্য নং ৩



তথ্য নং ৪ ( depending on data on 24 March, 2020)
সংক্রামিত ৩৯, মৃত্যু ৪, সুতরাং, বাংলাদেশে মৃত্যুহার ১০.২৫%। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং ডাক্তার (ভাইরোলজিস্ট নয়) গণমাধ্যমে কিছুদিন আগে বলেছিলেন কোভিড ১৯ গুরুতর রোগ নয়, এর মৃত্যুহার প্রায় ১%। এখন তাদের‌ জ্ঞানগর্ভ মতামত আশা করছি।

তথ্য নং ৫
বিদেশ ফেরত বেশিরভাগ লোককে প্রশ্ন করলে বলে কয়েকটি বিমানবন্দরে তার স্ক্যানিং করা হয়েছে, তার দেহে কোনও করোনা ভাইরাস নাই।‌ কিন্তু, বিশ্বাস করেন বিশ্বের কোনও বিমানবন্দরে ভাইরাস স্ক্যানার নাই, যা আছে তা হল থার্মাল স্ক্যানার যেটি শুধু আপনার দেহের জ্বর সনাক্ত করতে পারে, কোনও ভাইরাস নয়। আর করোনা ভাইরাস দেহে প্রবেশের ৩ থেকে ১৪ দিন পর‌ জ্বর হয়, তাই দেশে ফেরার সময় আপনার দেহে জ্বর না থাকলেও ভাইরাস যে ছিলো না এই গ্যারান্টি আপনি দিতে পারবেন না। তাই, দয়া করে নিজের পরিবার ও দেশের মঙ্গলের জন্য বিমানবন্দরের সব পরীক্ষায় পাশ করলেও নিজেকে ১৪ দিনের জন্য অন্যদের কাছ থেকে আলাদা রাখুন।

তথ্য নং ৬
অতি সংক্রামক জীবাণু নিয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যেসকল ডাক্তার ও নার্স Covid-19 (করোনা ভাইরাস জনিত রোগ) রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা দিবেন তাদেরকে অবশ্যই নিজেদেরকে রোগটি থেকে রক্ষা করার জন্য Personal Protection Equipment ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ, Personal Protection Equipment ব্যবহারের সময় তাদেরকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কিছু আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। এমনকি কীভাবে এগুলো পরিধান করবেন বা খুলবেন এবং খোলার পর কীভাবে এবং কোথায় সেগুলো রাখবেন তার জন্য সুনির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। তাই প্রশিক্ষণ ছাড়া এগুলো জানা এবং মানা অসম্ভব। এমনকি এসব আচরণবিধিতে অভ্যস্ত হতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়। কিন্তু মিডিয়াতে শুধু দেখাচ্ছে যে বিভিন্ন হাসপাতালে Covid-19 রোগীদের জন্য শুধু বেড ঠিক করে রাখা আছে। এই বলছে যে এসব হাসপাতালে পর্যাপ্ত Personal Protection Equipment রয়েছে। কিন্তু আমি জানিনা এসব হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের জন্য Personal Protection Equipment ব্যবহারের উপর এখন পর্যন্ত কোনও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি প্রশিক্ষণ ছাড়া এসব উপকরণ ব্যবহার তাদের এই রোগ থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করবে না। আর ডাক্তার ও নার্সদেরকে স্বাস্থ্য ঝুকিতে ফেলার অর্থ হচ্ছে সমগ্র জাতিকে স্বাস্থ্য ঝুকিতে ফেলা।


তথ্য নং ৭
বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা জার্নাল The Lancet: Infectious Diseases এ প্রকাশিত "Real estimates of mortality following COVID-19 infection" নামক প্রবন্ধে গবেষকরা উল্লেখ করেন যে তাদের নিয়মে হিসেব করলে COVID-19 এর ক্ষেত্রে চীনের উহানে মৃত্যুর হার ২০% এর মতো হবে।
তাদের মতে যেহেতু করোনা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার কয়েক সপ্তাহ পর রোগী মারা যায় তাই মৃত্যুর হার হিসেব করা উচিত নির্দিষ্ট দিনে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যার মধ্যে কতজন মারা গেলো সেটা হিসেব করে। ধরুন ১২ জানুয়ারিতে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যার ১০০ জন। এই ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মারা গেছেন। সেক্ষেত্রে মৃত্যুহার হবে ১৫%।
এখানে গবেষক দল ১৪ দিন আগে নিশ্চিত COVID-19 সংক্রমণের রোগীর সংখ্যা দ্বারা প্রদত্ত দিনে মৃত্যুর সংখ্যা বিভক্ত করে মৃত্যুহার পুনরায় গণনা করে যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গণনা পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। COVID-19 এর মৃত্যুহার গণনার ক্ষেত্রে তাদের এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তুলনামূলক হিসেব তারা নিচের চিত্রে মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। তাদের মতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মধ্যে সময়ের পার্থক্য যদি আরো বেশি ধরা হয়, তাহলে মৃত্যুহার আরও বেশি পাওয়া যাবে । এভাবে হিসেব করলে উহানে COVID-19 এর মৃত্যুহার ২০%-এর বেশি হতে পারে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে চীনের উহানে COVID-19 এর মৃত্যুহার মাত্র ৫.৬% এবং চীনের বাহিরে অন্য দেশসমূহে ১৫.২%। তাই এই গবেষক দলের মতে মৃত্যুহার গণনা ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি ব্যাবহার করা উচিত তা না হলে বর্তমান পরিসংখ্যানে প্রচারিত নিম্ন মৃত্যুহার (৫.৬%) COVID-19 এর সম্ভাব্য হুমকিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে ।
তথ্যসূত্রঃ
David Baud, Xiaolong Qi, Karin Nielsen-Saines, Didier Musso, Léo Pomar, Guillaume Favre. Real estimates of mortality following COVID-19 infection. Lancet Infect Dis. 2020 March.


তথ্য নং ৮
চীনের একদল বিজ্ঞানী COVID-19 এর সংক্রমণের একটি ঘটনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমান করেন যে লক্ষনবিহীন ক্যারিয়ার (asymptomatic carrier) এর মাধ্যমে COVID-19 রোগ ছড়াতে পারে।
তাদের এই গবেষণা একটি নামকরা জার্নালে প্রকাশিত হয় (তথ্যসূত্র দেখুন)। গবেষণার ফলাফল নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।
রোগী নং ১ একজন COVID-19 রোগের লক্ষনবিহীন ক্যারিয়ার (asymptomatic carrier) , অর্থাৎ তার দেহে করোনা ভাইরাস উপস্থিত থাকলেও COVID-19 রোগের কোনও লক্ষন ছিল না। রোগী নং ১ ছিলেন ২০ বছর বয়সী নারী যিনি উহানে (Wuhan) বসবাস করতেন এবং ১০ জানুয়ারী ২০২০ এ চীনের আরেকটি প্রদেশ আনিয়াং-এ (Anyang) ভ্রমণ করেন। গত ১০ জানুয়ারি তিনি রোগী নং ২ ও ৩ সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে বৈঠক করেন । গত ১৩ জানুয়ারি তিনি রোগী নং ২,৩,৪,৫ এবং ৬ সঙ্গে নিয়ে এক হাসপাতালে ভর্তি আত্মীয়কে দেখতে যায় যেখানে COVID-19 এর কোনও রোগী ছিল না । কয়েক দিনের মধ্যে তার আত্মীয়দের (রোগী নং ২,৩,৪,৫ এবং ৬) মধ্যে COVID-19 রোগের লক্ষন প্রকাশ পায়। উল্লেখ্য যে রোগী নং ২,৩,৪,৫ এবং ৬ এর মধ্যে চারজন নারী এবং দুজন পুরুষ। এদের বয়স ৪২ থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে। এই পাঁচজন রোগীর কেউ উহান ভ্রমণ করেনি বা অন্য কোন লোকের সাথে যোগাযোগ করতো না, যারা উহান ভ্রমণে গিয়েছিল (রোগী নং ১ ছাড়া) । এই পাঁচজন রোগীর মধ্যে COVID-19 রোগের লক্ষন থাকলেও রোগী নং ১ এর মধ্যে কোনও লক্ষন ছিল না (চিত্রটি লক্ষ্য করুন)। তবে ২৮ জানুয়ারি তারিখের পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী রোগী নং ১ এর দেহে করোনা ভাইরাস উপস্থিতি প্রমান হয় এবং ৫ ও ৮ ফেব্রুয়ারিতে করা পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী তার দেহের আর কোনও করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়না (চিত্রটি লক্ষ্য করুন)। এভাবে রোগী নং ১ করোনা ভাইরাস বহন করলেও তার মধ্যে COVID-19 রোগের লক্ষন ছিল না অর্থাৎ তিনি সবসময় সুস্থ্ ছিলেন কিন্তু তার মাধ্যমে তার পাঁচজন আত্মীয় COVID-19 রোগে মারাত্মকভাবে অসুস্থ্ হন।
তথ্যসূত্রঃ
Bai Y, Yao L, Wei T, Tian F, Jin DY, Chen L, Wang M. Presumed asymptomatic carrier transmission of COVID-19. Jama. 2020 Feb 21.

No comments:

Post a Comment

Pageviews last month